Gutlur sathe gultani (গুটলুর সাথে গুলতানি)
1/5
()
About this ebook
লেখক চাকুরি জীবনে দক্ষিণ পূর্ব রেলের দায়িত্ব পালনের সূত্রে বিভিন্ন স্থানে বেড়ানোর সময় বৈচিত্র্যময় ঘটনা ও বিচিত্র চরিত্রের মানুষের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পান। পরবর্তীকালে সেই সব অভিজ্ঞতাই গল্পের ছলে প্রিয় নাতি 'সৌম্য' (গুটলু)-কে শোনাতে হত। মুখে বলা সেই গল্প নিয়েই এই বই 'গুটলুর সাথে গুলতানি'।
তুহিনকান্তি ঘোষ। জন্ম ১১ কার্তিক ১৩৪৪, পূর্ববাংলা অধুনা বাংলাদেশের বগুড়া জেলার চন্দবাইসাতে। পারিবারিক সূত্রে ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ। ১৩৫৮-তে খিদিরপুরের 'মুসলিম সমিতি' আয়োজিত সাহিত্য প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভের সুবাদে 'যুগান্তর পদক' প্রাপ্তি। পরবর্তীকালে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। 'পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড'-এর বাংলা প্রকাশনা জগতের মুখপত্র 'পুস্তক মেলা'র বিভিন্ন সংখ্যায় তাঁর সুচিন্তিত রচনা প্রকাশ পেয়েছে।
Tuhin Kanti Ghosh (তুহিন কান্তি ঘোষ)
তুহিনকান্তি ঘোষ (Tuhin Kanti Ghosh)। জন্ম ১১ কার্তিক ১৩৪৪, পূর্ববাংলা অধুনা বাংলাদেশের বগুড়া জেলার চন্দবাইসাতে। পারিবারিক সূত্রে ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ। ১৩৫৮-তে খিদিরপুরের 'মুসলিম সমিতি' আয়োজিত সাহিত্য প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভের সুবাদে 'যুগান্তর পদক' প্রাপ্তি। পরবর্তীকালে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। 'পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড'-এর বাংলা প্রকাশনা জগতের মুখপত্র 'পুস্তক মেলা'র বিভিন্ন সংখ্যায় তাঁর সুচিন্তিত রচনা প্রকাশ পেয়েছে।
Related categories
Reviews for Gutlur sathe gultani (গুটলুর সাথে গুলতানি)
1 rating0 reviews
Book preview
Gutlur sathe gultani (গুটলুর সাথে গুলতানি) - Tuhin Kanti Ghosh (তুহিন কান্তি ঘোষ)
গুটলু আমার গল্প শোনার একজন খুব ভাল শ্রোতা, সু-পাত্র্। দিনে যে কতগুলো গল্প ওকে শোনাতে হয় তার কোন হিসেব নেই। রাতের খাবার খাওয়ার পর আবার আমার পাশে --- গল্প শুনতে শুনতে তারপর
, তারপর
বলতে বলতে সে ঘুমুবে। আমি বলি, 'বেশ, চল, বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্প শুনবে।" না, তা হবে না। সোফায় বসে গল্প শুনবে। ওর যুক্তি সোফা হচ্ছে নাকি আমার ফেবারিট সিট। হয়ত কোনদিন বলেছিলাম, সেটাই আমার উপর প্রয়োগ করে। রোজ রোজ কোথায় অত গল্পের মাল মশলা পাই? কোন গল্প যদি একবার বলি সেটা দু'বার আর শোনান যাবে না। গুটলু এখন বড় হয়েছে, এখন নিজে নিজেই বই পড়ে। তাই আমাকেই জোর করে ওকে গল্প শোনাতে হয়। সম্প্রতি যেহেতু ও আমার কাছ থেকে দূরে মুম্বই গেছে তাই হুকুম হয়েছে একটা গল্পের বই, অবশ্যই তা ছোটদের জন্যলিখতে। ওর স্থির বিশ্বাস আমার গল্প অনেক ছোটদেরই ভাল লাগবে।
যাক, শুরু করি প্রথম গল্প। ছোটরা দিনের বেলায় খুব সাহসী আর রাত হলেই একেবারে ভীতুর ডিম হয়ে পড়ে। আবার ভূতের গল্প না শুনেলও ভাল লাগে না। যদিও তারা জানে, ভূত বলে কিছুই নেই। গল্প শুনতে হলে দিনের বেলা চলবে না, কারণ ভূতের গল্পের মজা হচ্ছে রাতের বেলা। তাই অদ্ভূত ভূতের গল্প দিয়েই শুরু করছি।
আমাকে চাকুরির জন্য নানা জায়গায় যেতে হত। টাটানগরের কাছে একটা ছোট জায়গা আছে যার নাম 'সিনি জং। রেলের একটা ছোট কারখানা আছে এখানে। তাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে একটা জনপদ। তখন আমার নতুন চাকরি, বয়সও কম্। সেদিন ছিল জ্যোৎস্না পুলকিত রাত। তিন চার দিনের ট্যুরে এসেছি। আমার যে সেবক সে আমার সব সুখ সুবিধের ব্যবস্থা করে দিতে তার এক বন্ধুর বাড়ি গেল রাত কাটাতে। আমি আমার বিশ্রাম ঘরের বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে চাঁদের আলো দেখছি। রাতকে দিন মনে করে মাঝে মাঝে কা-কা করে কাক ডাকছে, ভুল ভাঙলে আবার থেমে যাচ্ছে। ওই রাতের নির্জনতা আমাকে মুগ্ধ করে দিয়েছিল। কারখানায় রাতে দু-চারজন লোক থাকে জরুরি কাজ সামলাবার জন্য। তাই দিনের কর্ম মুখরতা কর্ম চাঞ্চল্য কিছু নেই। হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি, আমি বাইরে গেলে কিছু গল্পের বই আর রেডিওটা সঙ্গে নিয়ে যাই। তবে এবারে তাড়াহুড়োয় রেডিওটা আনা হয়নি। বারান্দায় একটা বই হাতে নিয়ে একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়েছি, হঠাৎ তাকিয়ে দেখি আমার চেয়ারের কাছে একজন কেউ মেঝের ওপর উবু হয়ে বসে আছে। আমি তার দিকে তাকাতেই সে হাত জোড় করে আমার কাছে মাফ চাইতে লাগল। আমি পড়লাম বিপদে। তাকে তো আমি চিনিই না, কেন তাকে মাফ করব, কি তার অন্যায় আমি তো কিছুই মনে করতে পারলাম না। তার জবাবে সে একটা গল্প শোনাতে শুরু করল। আমাকে অনুরোধ করল যে আজ রাতের খাওয়া-দাওযার পর কোনওমতেই আমি যেন পূর্ণিমার রাতের আকর্ষণে বাইরে না বেরোই। কেন? কারণ এরকম পূর্ণিমার রাতে একজন সাহেব ভূত এখানে আসে। তার মাথায় থাকে সোলার হ্যাট, একহাতে ওয়াকিঙ্ স্টিক্ ও আর এক হাতে ঝোলান ইলিশ মাছ। সে নাকি জ্যান্ত লোক দেখলেই শরীরের রক্ত শুষে শুষে খায়। আমি তো খুব মজা পেলাম। হেসে বললাম, আমার একটা সাহেব ভূত খুব দরকার।
একথা শউনে সে রেগে চলে গেল। আমি রাতের খাওয়া শেষ করে রেস্ট হাউসের লাগোয়া জায়গায় পায়চারি করতে বেরোলাম।
ঘড়িতে তখন রাত সবে সাড়ে দশটা। চারিদিকে ছোট ছোট ঝোপঝাড় ও দূরে বড় বড় গাছ গাছালিগুলি পূর্ণ চাঁদের আলোয় এক অপূর্ব মায়াজালের সৃষ্টি করেছে। আর আমি এই মায়াজালে সম্পূর্ণ আবিষ্ট হয়ে গান ধরলাম, চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে...।
গানের অন্তরায় পৌঁছতে না পৌঁছতেই পেছন থেকে ডাক, স্যার
। ফিরে তাকিয়ে দেখি সেই মূর্তিমান্। এবারে বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কে হে?
জবাব পেলামএঁজ্ঞে, আমি উত্তম মহাপাত্র।"
তুমি তো দেখছি ভয়ে কাঁপছ! আমাকে কিছু সাহেব ভূত ঠাওরালে নাকি?
আবার আগের মতোই সে কপালে জোড়হাতে ঠেকিয়ে আমার কাছে মাফ চাইল। এর আগেও তো বাপু মাফ করেছি, আবার মাফ করার কি আছে?